সোমবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৪, ২১শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
  • সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা কামালসহ গ্রেপ্তার ৪

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রায় ৫ বছর

থমকে আছে অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প

মেহেদী হাসান আকন্দ,নেত্রকোণা

প্রকাশিত:
২৭ আগষ্ট ২০২৩, ১১:৪৮

নেত্রকোণায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রায় ৫ বছর, থমকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারী মন্ত্রীসভায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় নীতি পাস হয় এবং ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোণা জেলা শহরের রাজুর বাজার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক(সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়। আগামী অক্টোবর মাসে পাঁচ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক(সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই শেষ হতে যাচ্ছে স্নাতক কোর্স।


বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ৪ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, ১০ তলা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস, ১০ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস, লাইব্রেরি, আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি, শিক্ষক ডরমিটরি ভবন, ক্যাফেটিরিয়া, মেডিক্যাল ও ডে-কেয়ার সেন্টার, মিনি স্টেডিয়াম, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, মেডিটিশন সহ অত্যাধুনিক সুবিধাসম্বলিত শেখ হাসিনা বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনে নেত্রকোণা জেলা শহরের রাজুর বাজারের সন্নিকটে কুড়িয়া বিলে রামপুর, গোবিন্দপুর, সাহিলপুর, কান্দুলিয়া ও রায়দুমরুহি মৌজায় ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। নিচু এই জায়গায় ভরাটের জন্য ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মেসার্স নুরুজ্জামান খান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ভূমি উন্নয়নে ২৩৯ কোটি ৫৫ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮ ’শ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ মাসে ভূমি উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার শর্ত থাকলেও জুন মাসের মধ্যে কাজ হয়েছে ৬৩.২৬ শতাংশ। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিশ্বাস ট্রেডিং এন্ড কনস্ট্রাকশন নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ৪ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য ১০৩ কোটি ৭১ লক্ষ ৭৭ হাজার এক’শ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার শর্ত থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র ১১.৭০ শতাংশ।

২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর টিবিএল-ইইএল জেভি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ১১৪ কোটি ৮২ লক্ষ ৩২ হাজার ৫ ’শ টাকা ব্যয়ে ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে একাডেমিক ভবন নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার শর্ত থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৮.৬৯ শতাংশ। ২০২২ সালের ২০ আগষ্ট মেসার্স ব্রাদার এন্ড ব্রাদার কনস্ট্রাকশন-ইলেক্ট্রো গ্লোব জেভি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ২৭ কোটি ৪২ লক্ষ ১৭ হাজার ৫ ’শ টাকা ব্যয়ে ২ তলা বিশিষ্ট টিএসসি ভবন নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর আগষ্ট মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার শর্ত থাকলেও ২৫.৩৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর মেসার্স ব্রাদার এন্ড ব্রাদার কনস্ট্রাকশন-ইলেক্ট্রো গ্লোব জেভি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ১৯ কোটি ৯৯ লক্ষ ৮৫ হাজার ৭ ’শ টাকা ব্যয়ে ২ তলা বিশিষ্ট ক্যাফেটেরিয়া ভবন ও ১ তলা নিরাপত্তা ব্যারাক ভবন নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চলতি বছর অক্টোবর মাসের মধ্যে ক্যাফেটেরিয়া ভবন ও নিরাপত্তা ব্যারাক ভবন নির্মাণের শর্ত থাকলেও ২৭.৬২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর ম্যাক্্র ইনফ্রাকচার লিমিটেড ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ২৬ কোটি ৪২ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫ ’শ টাকা ব্যয়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারী মহসিন-চৌধুরী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ৫৯ কোটি ৪৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩ তলা বিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবন নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারী এসএস-এমকেআই জেভি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ২৭ কোটি ৭৮ লক্ষ ৭২ হাজার ৯ ’শ টাকা ব্যয়ে ৪ তলা বিশিষ্ট মেডিক্যাল ও ডে-কেয়ার সেন্টার ও ৩৪ কোটি ৪৯ লক্ষ ৪০ হাজার ২ ’শ টাকা ব্যয়ে ১০ তলা বিশিষ্ট শিক্ষক ডরমিটরি ভবন নির্মানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চলতি বছরের ১৪ মে বিশ^াস ট্রেডিং এন্ড কনস্ট্রাকশন ৯৭ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১০ তলা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস এবং ৯৫ কোটি ৯৭ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯ ’শ টাকা ব্যয়ে ছাত্রী নিবাস নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়াও গত ২৩ মে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দরপত্র আহবান করা হয়েছে।


লাইব্রেরি ভবন নির্মাণের অগ্রগতি ১০ শতাংশ হলেও মেডিক্যাল ও ডে-কেয়ার সেন্টার, শিক্ষক ডরমিটরি ভবন, ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাস নির্মান কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বদ্যালয়ে অনেক আশা ভর্তি হয়েছিলাম। আশা অপূর্ণ রেখেই বিশ্বদ্যালয় থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের সাথে একই ক্যাম্পাসে ক্লাস করে বিশ্বদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হলো। শহরের অপরপ্রান্তে ৩ কিলোমিটার দুরে সাতপাই এলাকায় ভাড়ার বাসায় বিশ্বদ্যালয়টির অধ্যয়নত ৪২২ জন শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের ভিতরের রাস্তাগুলো খানাখন্দকে যাতায়াত অনুপযুগী। বিশ্বদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত ৪২২ জন শিক্ষার্থী এবং নতুন শিক্ষাবর্ষে ১২৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাত্র ৮ জন প্রভাষক এবং ৮ জন সহকারী অধ্যাপক দিয়ে বিশ^বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।


শেখ হাসিনা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম কবীর জানান, বিশ্বদ্যালয়ে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ৮৫ জন শিক্ষার্থীর অনার্স কোর্স চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই শেষ হবে। নতুন শিক্ষাবর্ষে ১২৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ হতে মাস্টার্স কোর্স চালু হবে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিশ্বদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবকাঠামো নির্মাণ বিলম্বিত হচ্ছে। কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহ সুদৃষ্টি প্রদান করলে বিশ্বদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের কাজ আরও বেশি তরান্বিত হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিশ্বদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আংশিকভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত করতে পারবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর