রবিবার, ৬ই অক্টোবর ২০২৪, ২১শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
  • সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা কামালসহ গ্রেপ্তার ৪
  • চুক্তিতে খাদ্য সচিব হলেন ইলাহী দাদ খান

শিশুদের মোবাইল আসক্তি ও সচেতনতা

আরমান হোসেন

প্রকাশিত:
৩০ জুলাই ২০২৩, ১৫:২১

ছেলেটার বয়স ৮ কিংবা ৯ হবে। বাস কাউন্টারে বসা, হাতে স্মার্টফোন। এসে বসার পর থেকে ফোনের গেমে ডুবে আছে সে। আশপাশ খেয়াল নেই! সম্মোহিতের মতো গেমের মধ্যে দৌড়ে দৌড়ে গুলি করে মানুষ মারছে। পুলিশ এলে পুলিশের গাড়িটাও উড়িয়ে দিলো গ্রেনেড মেরে!! ঘটনাটি খুব ছোট্ট মনে হলেও এ প্রজন্মের সবচেয়ে বড়ো সুবিধা ও অসুবিধার যন্ত্র এই স্মার্টফোন।

যা ভাবাই যেতো না একসময়, তাই তো এখন নতুন। আর পরম আনন্দে তা মেনে নেয়ার নামই আধুনিকতা! নয়তো অসংখ্য লোভনীয়, প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হতে হয়। ঠিক! কিন্তু, ব্যবহারে কি কোন বিধি আছে? কোন নিয়ম- কানুন আছে? নেই! থাকে না!! হয়তো দরকারও নেই?

বাংলাদেশের ৮৬ শতাংশ প্রি-স্কুল শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশুর মারাত্মকভাবে স্মার্টফোনের আসক্তি রয়ছে। এ আসক্তির কোথা থেকে শুরু? এর শুরু হয় শিশুর আধো আধো বুলির সময় স্মার্টফোন তুলে দেয়ার মাধ্যমে। কান্নারত থামাতে সেই যে ফোন তুলে দেয়া হয়েছিলো তার থেকে ধীওে ধীরে অভ্যাস ও আসক্তিতে চলে যায়। যে কথা অভিভাবকদের অজানাই থেকে যায়, যখন জানা হয় তখন সন্তান রীতিমত "বিগার গ্যেয়া!" প্রতি ১০ জন মায়ের মধ্যে ৪ জনই সন্তানের স্মার্টফোনের আসক্তি সম্পর্কে জানেন না।

বাবা-মা সন্তানদের সময় কম দেওয়ার কারণে ৮৫ শতাংশ শিশু স্মার্টফোন আসক্তিতে ভুগছে। তাছাড়াও খেলার মাঠের অভাবে ৫২ শতাংশ ও খেলার সাথীর অভাবে ৪২ শতাংশ শিশু স্মার্টফোনের দিকে আসক্ত হচ্ছে।

জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের শিশুরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কর্তৃক সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ সময়ের প্রায় ৩গুণ।

অবিভাবকরা কেন সন্তানদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেন? কারণ সন্তানরা স্মার্টফোনে ব্যস্ত থাকলে তারা দ্বিধাহীন কাজ করতে পারেন। তাছাড়া স্মার্টফোন দিলে বাচ্চাদের খাওয়ানো ও ঘুম পারানোর সহজ হয়।

যে সুবিধাদি নিয়ে মা-বাবা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দিচ্ছেন তাতে সন্তান কি ক্ষতি সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তা কেউ ক্ষতিয়ে দেখি না। মোবাইল আসক্তির কারণে শিশুদের নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্তাকে স্মার্টফোন দেওয়া আর একবোতল মদ কিংবা এক গ্রাম কোকেন তুলে দেওয়া সমান করা। কি সাংঘাতিক! স্মার্টফোন আসক্তি মাদকাসক্তির মতোই সাংঘাতিক।

শিশু অতিরিক্ত স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের সমস্যা বাড়ছে। শিশুদের অল্পতেই রেগে যাওয়া, বিষন্নতা, মনোযোগের অভাব এরসবই অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে হয়ে থাকে।

অনেকের কাছেই, মোবাইলের আসক্তি বলে কিছু নেই। প্রযুক্তির সাথে থাকায় তো ভালো! কিন্তু সব ভালো কি আসলেই ভালো? সেরকমই একটি ভালো এই স¥ার্টফোন আসক্তি।

 


বিশ্বের জায়ান্ট প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফট এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তার সন্তানদের ১৪ বছরে আগে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দিতেন না। কম্পিউটার সহ অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ছিলো সময় বাঁধা। ভাবুন, কোন সমস্যার সচেতনতায় মোবাইল ব্যবহারে এ কঠোরতা!

অথচ আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কি? তাদের কি চোখে চশমা পড়া, কানে কম শোনা, অমনযোগীতায় আমরা নিজেরাই ঠেলে দিচ্ছি না?

বাচ্চা কাঁদে? মোবাইল দাও। বাচ্চা খায় না? মোবাইল দাও। ঘুম আসে না? মোবাইল...! দেখুক! কি আর হবে?? যদি এমন মনে হয়,তাহলে আপনার সন্তানের ক্ষতিতে অংশগ্রহন করছেন, মনে রাখুন!

এর সমাধান খুঁজতে চান না বা সে বোধ আসেই না অভিভাবকদের। তবে, সত্যি সমাধান অতীব জরুরী। কিভাবে ক্ষতি হচ্ছে সবাই বলছি কিন্তু সমাধান নিয়ে কেউ কথা বলছি না। যদি ছোট্ট শিশুটির জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ ভাবেন সেক্ষেত্রে সন্তানের বেড়ে সুন্দর বেড়ে ওঠা নিশ্চিতে তাদের সময় দিন। সন্তান না খেলে বা না ঘুমালে গল্প বা অন্য কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রাখা। ধর্মীয় কাহিনী শোনানো, নৈতিক শিক্ষা দেয়ার মতো বিষয়গুলোতে সম্পৃক্ত করা।

এটা অবশ্যই ঠিক যে পড়োশোনা জন্যও তো স্মার্ট ডিভাইস লাগছে, তাতে ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করুন। ফোনে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করুন। যাতে সন্তানে স্ক্রীন টাইম, কি ব্রাউজ করছে তার সব আপনার নজরে থাকে।

আপনার সন্তান নেটে কি দেখছে। দিনে রাতে কত সময় পর্যন্ত ফোন ব্যবহার করবে, কোন বয়সে স্মার্টফোন ব্যবহার করবে তারও একটা নিয়ম করা উচিত।

খাবারের সময় পরিবারের সবাই একসাথে খাবার খাওয়া। সেইসাথে দিনের ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো সবাইকে বলার চর্চা রাখা যেতে পারে। বয়ঃসন্ধির সময় তাদেও সাথে খোলামেলা আলোচনা করা। কেননা এসময় মনে প্রচুর জিজ্ঞাসা তৈরী হয়। আর যেহেতু সেগুলো যৌনতা সমন্ধিত তাই সন্তান যাতে উত্তর খুঁজতে গিয়ে কু-অভ্যাসে না জড়িয়ে যায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

আসুন ইতিবাচক হই। ভাবি, কি চাই আমরা? আসক্ত আগামী প্রজন্ম! নাকি সুস্থ ও সুন্দর? সবার সচেতন হবার সময় এসেছে, কেননা বর্তমান পদক্ষেপের মাধ্যমেই আপনার সন্তানসহ পরিবার, রাষ্ট্র তথা বিশ্বের জন্য মঙ্গলকাব্য রচনা হবে।

 

লেখক: আরমান হোসেন, পাবলিক রিলেশন এন্ড ব্র্যান্ডিং প্রফেশনাল, মোটেক্স ফ্যাশন ।  মোটেক্স সোর্সিং, ইমেইল:armanhs993@gmail.com


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর