প্রকাশিত:
১১ জুন ২০২৫, ১৭:২৫
এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশবাসীর কাছে প্রায় আচমকা এই ঘোষণা পৌঁছে যায় যে আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঈদের আগের দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ চলমান। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর জন্য এই ঘোষণা অস্বস্তির। বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর মধ্যেও ক্ষোভ।
‘ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাই’, তাদের এই দাবি উপেক্ষিত হয়েছে বলে দলগুলো মনে করে। বিএনপি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং প্রধান উপদেষ্টা শব্দ চয়নে ‘রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ করেছেন বলে অভিযোগ করেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ‘ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ’ ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিক জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল এবং এনসিপি নির্বাচনের ঘোষিত সময় সম্পর্কে শর্ত দিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
সার্বিক এই অবস্থায় কী হতে যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি—এই প্রশ্ন এখন সর্বত্র।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা যদি এপ্রিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় থাকেন তাহলে দেশের রাজনীতিতে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর আসলে বোঝা যাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে। আবার কারো মত, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের স্বার্থে মতপার্থক্য এড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে এপ্রিলের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হচ্ছে—এই ধারণা মাথায় রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া।
বিশেষজ্ঞ মত : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা যদি এপ্রিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় থাকেন তাহলে দেশের রাজনীতিতে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে।
কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনকে উৎসবমুখর পরিবেশে দেখতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচন এনজয় করে। এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে রোজার মাস, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা—এসব কারণে সাধারণ মানুষের কাছে নির্বানের আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যাবে। বিএনপিসহ বিভিন্ন দল এসব বিবেচনা করেই এপ্রিলে নির্বাচনের বিরোধিতা করছে।
এসব দল মনে করছে, ডিসেম্বরে নির্বাচনের পর নতুন বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার গঠন হোক। নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আছে। সেনাবাহিনীও ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সেনানিবাসে ফিরতে চায়। এ অবস্থায় এপ্রিলে নির্বাচন করতে গেলে রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে শত্রু বিবেচনা করবে। প্রধান উপদেষ্টার অন্য কোনো ডিজাইন যদি না থাকে তাহলে নির্বাচনের সময় আরো এগিয়ে আনতে পারেন। নির্বাচনের সময় একতরফাভাবে চাপিয়ে না দিয়ে দলগুলোর সঙ্গে বসে এটি করতে পারেন তিনি।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের স্বার্থে মতপার্থক্য এড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে এপ্রিলের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হচ্ছে—এই ধারণা মাথায় রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া। এর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সময় যদি আরো কমে আসে তাতেও সমস্যা নেই। আর অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচনের আগে যে সময় রয়েছে তার মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘জনমনে একটা আশঙ্কা রয়েছে নির্বাচন নিয়ে। এটা থাকা স্বাভাবিক। কারণ এখনো সুনির্দিষ্ট করে কোনো রোডম্যাপ পায়নি জনগণ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন হওয়াটা জরুরি। কিন্তু কবে নাগাদ নির্বাচন হবে, সেটি এখনো বলা কঠিন। একেক সময় একেকটা তারিখ শোনা যাচ্ছে, কখনো ডিসেম্বর, কখনো জুন, এখন এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা আসছে। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর আসলে বোঝা যাবে যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে। আমাদের জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কী, সেটিও ওই মিটিংয়ের পর বোঝা যাবে।’
নির্বাচন যত দেরিতে হবে বিএনপির জন্য ততই ক্ষতি। ডিসেম্বর পার হয়ে জানুয়ারি এলেই আরো নতুন ভোটার। কয়েকটি দলের ধারণা, তারা নতুন ভোটারদের সমর্থন পাবে। এ জন্য ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন—এই দাবি থেকে বিএনপির সরে আসাটা দলীয়ভাবে ক্ষতি হবে বলে দলটির নেতারা হয়তো ভাবছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, দেরি হলেই তাদের লাভ। এনসিপি আরেকটু সময় চাইবে, যাতে তারা তাদের দলটা গোছাতে পারে।
শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি কিছুটা মুখোমুখি অবস্থায়। বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সরকারের অধীনে শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন হবে কি না, বিএনপি এটা বিশ্বাস করে কি না—এটার ওপর আসলে অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি বিশ্বাস না করে, পরিস্থিতি যদি জটিল হয়, তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকারের পর একটা কেয়ারটেকার সরকারের প্রয়োজন হবে। সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলোর বেশির ভাগ বিষয় বাস্তবায়ন করতে জাতীয় সংসদের প্রয়োজন। সে কারণে এ সরকারের মূল কাজটা ছিল একটা নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা, তারপর নির্বাচনটা দিয়ে দেওয়া।
ইউনূস-তারেক বৈঠকের অপেক্ষা : নির্বাচনের সময় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, আগামী ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর তা অনেকটাই পরিষ্কার হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ওই বৈঠকে নতুন ‘ডাইমেনশন’ তৈরি হতে পারে। অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিকে এ সময়ের বড় ‘পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।
একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত নির্বাচনের সময়টা (আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন) ভোটের জন্য ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, রমজানের আগে প্রচার-প্রচারণায় অনেক সমস্যা হবে। প্রতিদিনই ইফতার মাহফিল করা লাগবে। নির্বাচনী ব্যয় দ্বিগুণ হবে। প্রচণ্ড গরমের কারণে সমাবেশে লোকজন আনা যাবে না। রাতে প্রোগ্রাম করতে হবে।
বিএনপির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গত ৬ জুন রাতে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা শেষে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ পর্যালোচনা করে সভায় সর্বসম্মতভাবে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে যে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রদত্ত তাঁর বক্তব্য প্রসঙ্গকে অতিক্রম করে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পরিণত হয়েছে। এই দীর্ঘ ভাষণে তিনি বন্দর, করিডর ইত্যাদি এমন সব বিষয়ের অবতারণা করেছেন, যা তাঁরই ভাষায় অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি ‘ম্যান্ডেট’-এর মধ্যে পড়ে না। ভাষণে তিনি শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।”
এ ছাড়া বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে সময়সীমা প্রস্তাব করেছেন তা পর্যালোচনা করে সভা মনে করে যে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে একদিকে আবহাওয়ার সংকট এবং অন্যদিকে রমজানের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অধিকন্তু কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ তাঁর ভাষণে উল্লেখ করা হয়নি।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে তার বিজয় অর্জিত হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানে অহেতুক বিলম্বে জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, ওই সভা রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমপর্যায়ের পরীক্ষা, আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকেই যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সংগতভাবেই শঙ্কিত হতে পারে বলে সভা মনে করে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্বেগ : প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরের দিন গত ৭ জুন বাম গণতান্ত্রিক জোট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঈদের আগের দিন দেওয়া ভাষণে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি, বরং রাখাইনে করিডর, চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে এবং ওই বিষয়ে বিরোধিতাকারীদের নিয়ে যা বলা হয়েছে এবং যে সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগেরও বটে।’ বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাখাইনে করিডর দেওয়ার প্রশ্নে যা বলতে চেয়েছেন তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে জনমত উপেক্ষা করে হলেও রাখাইনে করিডর দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে যেসব কথার অবতারণা করেছেন তা কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। এমনকি তিনি এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা প্রকারান্তরে মব সন্ত্রাসকেই উসকে দিচ্ছে। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কোনো পদে থেকে এ ধরনের উসকানি জনগণ গ্রহণ করবে না, বরং প্রত্যাখ্যান করবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও মানুষ এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এমনকি তারও আগে দ্রুততম সময়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চাইলেও প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছেন। রোজা, পরীক্ষা, ধান কাটা, বর্ষা ইত্যাদি বিষয় সার্বিক বিবেচনায় ওই সময়ে নির্বাচন মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা বলেছি, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমরা মনে করি, এ বছরের মধ্যেই এটি ভালোভাবে সম্ভব। এ সময়ে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞের বিচারের কাজ দৃশ্যমান করাও সম্ভব। কোনো অজুহাতে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার অর্থ হলো কোনো দল বা গোষ্ঠীর বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করা। দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাববলয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা, যা দেশকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ফেলতে পারে। ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে কেন নির্বাচন, তা বোধগম্য নয়। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ ফুটে উঠেছে। বেশির ভাগ দল ও জনগণের মতকে উপেক্ষা করে বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণার মধ্য দিয়ে ড. ইউনূস নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।’
জামায়াতের সন্তুষ্টি ও প্রত্যাশা : জামায়াতে ইসলামী একসময় জানিয়েছিল যে তারা আগামী বছর রোজার আগে নির্বাচন চায়। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে গত ২ জুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে দলটি জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। তারা নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে কঠোর নয়, নমনীয় থাকতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে জানালে গত ৬ জুন সন্ধ্যায় দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির আরো বলেন, ‘জাতির তীব্র আকাঙ্ক্ষা—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে এবং জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।’
এনসিপি যা চায় : জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য জায়েদ বিন নাসের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অনবরত চাপের ফলে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়েছে সরকার। তবে আমরা মনে করি, বিচার ও সংস্কারের দিকে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার।’
তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় যেকোনো রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে দেশে-বিদেশে বসতেই পারে। তবে গণ-অভ্যুত্থানের মূল্যবোধকে সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সরকারের সব কর্মধারা ও মিটিংয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিফলন থাকতে হবে। আমরা আলাপ-আলোচনা ও গঠনমূলক চর্চাকে ইতিবাচক হিসেবেই বিবেচনা করি এবং সরকারের ওপর সামগ্রিকভাবে আস্থা রাখতে চাই।’
মন্তব্য করুন: