প্রকাশিত:
১১ জুন ২০২৫, ১৭:১৫
কেউ সমুদ্রস্নান করছেন, কেউ ব্যস্ত জলকেলিতে। কারো আবার দূরের পাহাড় দেখে মুগ্ধতা শেষ হয় না। কেউ দুচোখ ভরে অপলক দেখে নিচ্ছেন দূরের ঝরনাধারা। ঈদের পর গত সোমবার থেকে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়ছেই।
কক্সবাজার বা সিলেটের ভোলাগঞ্জ বা খাগড়াছড়ির পাহাড়ি নির্জনতায় পর্যটকদের ভিড়ের কমতি ছিল না কোথাও। কেউ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে আবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় গিয়ে সমুদ্রের আরেক রূপ দেখতেও ভিড় করছেন। গতকাল মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় ছিল উপচে পড়া। এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটি মিলেছে।
সরকারি কর্মচারীরা পেয়েছেন ১০ দিনের ছুটি। তাঁদের এই ছুটি এখনো চলছে। ঈদের পর এবার তাই দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকরা ছুটে বেড়াচ্ছেন। কক্সবাজারের দীর্ঘতম বেলাভূমিতে গতকাল বিকেলে ভিড় জমে লক্ষাধিক পর্যটকের।
তবে কক্সবাজার শহরসংলগ্ন সৈকত ছাড়াও পর্যটকরা মেরিন ড্রাইভ, ইনানী পাথুরে সৈকত, পাটুয়ার টেক এবং লাল কাঁকড়া সৈকতেও ভিড় জমান। কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউসে এক রাতে প্রায় ৯০ হাজার পর্যটকের সংকুলানের ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোডের ইনানী সৈকত এলাকায়ও আছে বেশ কিছু আবাসিক রিসোর্ট। এসব রিসোর্টও আগেই বুকিং হয়ে গেছে। গতকাল বিকেলে ইনানী সৈকতে দাঁড়িয়ে রাজশাহীর রেহনুমা আহমেদ বললেন, ‘সমুদ্র দেখতে পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে এসেছি।
খুব উপভোগ করছি সাগরের ঊর্মিমালা। কক্সবাজার হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার পরিস্থিতি দেখে বললেন, এরই মধ্যে সব হোটেলের কক্ষই ভাড়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের পুরোটাই পর্যটকের ভিড় থাকবে।
জানা গেছে, উদ্ধারকারী সংস্থা সি-সেভ লাইফগার্ড দলের কর্মীরাও ঈদের আগে থেকেই সৈকতের তিনটি পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা নিরাপত্তার কাজে ব্যস্ত থাকেন। এখন সাগর উত্তাল। তার ওপর সৈকতে বালুচরে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সমুদ্রে নামার আগে পর্যটকরা যাতে বিচকর্মী, ট্যুরিস্ট পুলিশ বা উদ্ধারকারীদের সহযোগিতা নেন, তার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে বৃষ্টিপাতে সিলেটে প্রকৃতি সেজেছে নতুন করে। গত সোমবার থেকে নদীকেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক বাড়তে থাকে। গতকাল যেন তা পূর্ণতা পায়। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রথম দুই দিন কিছুটা হতাশায় কাটলেও গত সোমবার থেকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক উপস্থিতি বেড়েছে। মঙ্গলবার হোটেল-মোটেলগুলোতে বুকিং ৯০ শতাংশের বেশি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পর্যটকের গন্তব্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর ও সিলেট মহানগরীর কাছের রাতারগুল। এর পরই আছে গোয়াইনঘাটের জাফলং।
উত্মাছড়া, মায়াবী ঝরনা, চা-বাগান, লালাখানসহ সবখানেই গতকাল মঙ্গলবার পর্যটকে মুখর ছিল। রংপুর থেকে সপরিবারে বেড়াতে জাফলংয়ে যাওয়া জয়নাল মিয়া বলেন, ‘ঈদের ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এখানকার চারপাশের পরিবেশ খুব চমৎকার। জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনা যেন মন কেড়ে নিয়েছে। খুব সুন্দর একটি জায়গা। খুব ভালো লাগল।’ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সফাত উল্ল্যাহ বলেন, অন্যান্য বছর ঈদের দিন থেকেই পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে। দুই দিন ধরে ভ্রমণপিপাসুদের আগমন বেড়েছে।
গতকাল ভোর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে ঝাউবন পর্যন্ত অসংখ্য পর্যটক ভিড় করেন। তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠায় অনেকে সমুদ্রে স্নানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেখানে উপস্থিত মো. কাওসার ও নাসরীন জাহান দম্পতি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আতিথেয়তায় কুয়াকাটা অদ্বিতীয়। খাগড়াছড়িতে আলুটিলা, জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক, রহস্যময় গুহা, রিসাং ঝরনা এলাকা মুখর ছিল দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে।
জেলার ভাইবোনছড়ায় মায়াবিনী লেক, জেলা সদরের হাতিমাথা পাহাড়, পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, মাইচছড়ির দেবতা পুকুর এবং দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝরনায় ছুটে যান হাজারো পর্যটক। চট্টগ্রাম থেকে সপরিবারে বেড়াতে যাওয়া নজরুল ইসলাম বলেন, খাগড়াছড়িতে প্রথম বেড়াতে এসেই প্রেমে পড়ে গেলাম। পর্যটকদের ভিড়ে মুখর শহর রাঙামাটি। কাপ্তাই হ্রদজুড়ে গতকালও ছিল নৌবিহারের মনোরম দৃশ্য।
ঝুলন্ত সেতু দেখতে ভিড় ছিল। রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ভারতে ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকা এবং দেশের বাইরে অন্যান্য দেশে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় দেশের ভেতরে রাঙামাটিতেও ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের।
[প্রতিবেদনে তথ্য সহযোগিতা : বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার, নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি]
মন্তব্য করুন: