বুধবার, ১১ই জুন ২০২৫, ২৮শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • বিশ্বে মাত্র ১টি দেশ নিজের খাবারে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বাকিরা চরম বিপদে!
  • যেভাবে মোদির বিপদ বেড়েই চলছে
  • কাদের করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন, জানাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • বিয়েতে ১০০টি বিড়াল উপহার
  • ১৭ বছর পর ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে
  • বিশ্ববাজারে কমল জ্বালানি তেলের দাম
  • রাজনীতিতে নতুন মোড়
  • পর্যটনকেন্দ্রে ঈদছুটির মুখরতা
  • এবারও চামড়ার বাজারে ধস
  • ২৮৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, বরিশালেই ২৬১

এপ্রিলে নির্বাচন? গণতন্ত্রের পথরোধে একটি সুপরিকল্পিত ব্যত্যয়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১০ জুন ২০২৫, ১৩:২৮

বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র একটি সংকটজনক চক্রে প্রবেশ করেছে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি চার মাস সময় পার্থক্যের মতো মনে হলেও এর ভেতরে রয়েছে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্ত ও জনগণের মতামতের প্রতি নির্লজ্জ উপেক্ষা।

প্রথমত, আবহাওয়া ও জাতীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এপ্রিল মাসে নির্বাচন আয়োজন একটি দুরূহ ও জনবিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত। একদিকে তখন থাকবে তীব্র গরম, চৈত্র মাসের খরার প্রকোপ ও মার্চ মাস জুড়ে রমজান, সম্ভবত মার্চের ২০ তারিখের দিকে অনুষ্ঠিত হবে ঈদ উল ফিতর, মানে ভোটারদের মানসিক ও শারীরিকভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণের অনুপযোগী সময়। নির্বাচনী প্রচারণা যেমন কঠিন হয়ে পড়বে, তেমনি জনসম্পৃক্ততাও ক্ষীণ হয়ে যাবে।

এরপর আসবে কালবৈশাখীর মৌসুম। আচমকা ঝড়বৃষ্টি শুধু নির্বাচনী সভা-মিছিল নয়, টেকনিক্যাল প্রস্তুতি, ভোটগ্রহণ সামগ্রী পরিবহণ, এমনকি ভোটকেন্দ্র স্থাপনার ক্ষেত্রেও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

তৃতীয়ত, এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা, মূলত এ বছর এপ্রিলের ১০ তারিখ শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যস্ত থাকে পরীক্ষা আয়োজন ও তদারকিতে। একই সময়ে প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা নির্বাচন ব্যবস্থার দক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তার ওপর হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয় ঠিক তখনই মাটির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত কোটি কৃষকের জন্য এ সময় কোনোভাবেই নির্বাচনী অংশগ্রহণের অনুকূল নয়।

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হলো, এই এপ্রিলে নির্বাচন হলে নতুন সরকারের পক্ষে সময়মতো বাজেট প্রণয়ন কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এমন এক সময়ে বাজেট পেশ করতে হবে, যখন সংসদে নতুন সদস্যরা মাত্র দায়িত্ব নিচ্ছেন, মন্ত্রণালয়গুলো পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং রাজনীতি নতুন করে চালু হচ্ছে। এ জাতীয় সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আত্মঘাতী। প্রফেসর ড. ইউনুস একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ হয়েও এমন একটা বিষয়কে আমলে নিলেন না! নাকি ইচ্ছা করেই এমন ফাঁদ তৈরি করলেন, বোঝা কঠিন হয়ে গেছে।

এতসব বাস্তবতা জেনেও সরকার যদি এপ্রিলে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে, এটি শুধুই সময়ের ভিন্নতা নয়—এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি চক্রান্ত, যার পরিণতি দীর্ঘমেয়াদি ও ভয়াবহ।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারা? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল যখন ডিসেম্বরকে উপযুক্ত সময় হিসেবে চিহ্নিত করছে, তখন সরকার এই একগুঁয়েমি গণতান্ত্রিক ঐকমত্যের প্রতি অবজ্ঞার প্রকাশ।

প্যারিস থেকে যখন বার্তা আসে "রমজানের পর নির্বাচন"।তখন প্রশ্ন জাগে, এই সিদ্ধান্ত আদৌ বাংলাদেশ থেকে এসেছে, না কি এটি কোনো আন্তর্জাতিক নেপথ্য নির্দেশনা? এনসিপি নামক এক নিবন্ধনহীন দল যখন এই বার্তা প্রথমে তুলে ধরে, এবং তার পরপরই সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে সরকার এগোয়, তখন এর পেছনের খেলা বোঝা কঠিন নয়।

এনসিপি এখন আর কেবল ‘কিংস পার্টি’ নয় এটি যেন হয়ে উঠেছে ড. ইউনুসের রাজনৈতিক মুখপত্র। প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের খবর যখন প্রথম আসে এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের মুখে, তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় কারা আসলে ক্ষমতার ছায়া সরকারের চালক।

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য জাতিকে আরও হতাশ করেছে। তিনি মানবিক করিডোর প্রত্যাখ্যান করলেও বন্দরের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন, এমনকি বিদেশি শক্তির হাতে বন্দর হস্তান্তরের ইচ্ছাও পরোক্ষভাবে প্রকাশ পায়। এসব বক্তব্যে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার পরিবর্তে এক বিদেশমুখী সুবিধা দেওয়ার প্রবণতা পরিষ্কার হয়ে ওঠে।

এনসিপির একচেটিয়া সুবিধা, দল নিবন্ধন না থাকা সত্ত্বেও প্রথম সারিতে থাকার সুযোগ, এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বারবার বৈঠক করার অধিকার সবই বোঝায়, গণতন্ত্রের নামে একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ও নিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে সরকার ও তাদের উপদেষ্টা মহল।

মার্ক মাই ওয়ার্ড ড. ইউনুস এপ্রিলে নির্বাচন দেবেন না। এমন এক “তারিখ প্রহেলিকা” তৈরি করে তিনি শেষ পর্যন্ত তার ‘মানুষ বানানোর’ প্রকল্পে নেমে পড়বেন ডিসেম্বরে তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।

গণতন্ত্রের সঙ্গে এই নাটকীয় তামাশা বন্ধ করতে হলে এখনই সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নির্বাচন হোক গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে—নয়তো এর ফল হবে রাজনৈতিক বিক্ষোভ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক সংকটে পূর্ণ এক অগণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর