প্রকাশিত:
১০ জুন ২০২৫, ১২:৫২
সূর্যের অগ্ন্যুৎপাত ও সৌরঝড়ের প্রভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো উপগ্রহগুলোর আয়ু কমে যাচ্ছে—বিশেষ করে স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনই দাবি করেছেন নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের বিজ্ঞানী ডেনি অলিভেইরা।
যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী নিউ সায়েন্টিস্ট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌরচক্রের সর্বোচ্চ পর্যায় ‘সোলার ম্যাক্সিমাম’-এর সময় সূর্যের সক্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এতে সৃষ্টি হয় ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে ও তা প্রসারিত হয়ে উপগ্রহগুলোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। ফলে স্যাটেলাইটগুলোর কক্ষপথ ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে থাকে এবং তারা পূর্বাভাসের চেয়ে দ্রুতপূর্বক বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে পুড়ে যায়।
১০ দিন পর্যন্ত কমে যেতে পারে স্যাটেলাইটের আয়ু
অলিভেইরা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সময় উপগ্রহগুলো আশানুরূপ সময় টিকে থাকতে পারছে না। এমনকি তাদের আয়ু ১০ দিন পর্যন্ত কমে যেতে পারে।’
তিনি জানান, ২০২৪ সালের শেষ দিকে এমন একটি তীব্র সৌরঝড়ের ঘটনায় ৩৭টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় কক্ষপথ থেকে সরে গিয়ে বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে। স্বাভাবিক অবস্থায় এসব স্যাটেলাইট ১৫ দিন বা তারও বেশি সময় কক্ষপথে থাকার কথা ছিল।
স্টারলিংকের ৫২৩টি স্যাটেলাইট ইতোমধ্যে পুড়ে গেছে
২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে স্পেসএক্সের মোট ৫২৩টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে এবং সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। প্রতিটি স্যাটেলাইট এরকমভাবে ধ্বংসের জন্যই ডিজাইন করা, যাতে পৃথিবীর মাটিতে তা পড়ে কোনো ক্ষতি না করে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন যেভাবে প্রতি সপ্তাহে নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্যাটেলাইট পুড়ে ধ্বংস হবে।
স্পেসএক্স ইতোমধ্যে ৭ হাজারের বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে এবং ভবিষ্যতে ৩০ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
হুমকি না উপকার?
তবে এতে ক্ষতির পাশাপাশি কিছু উপকারও থাকতে পারে বলে মত দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী শন এলভিজ। তিনি বলেন, ‘মৃত বা অকেজো স্যাটেলাইটগুলো কক্ষপথ থেকে সরিয়ে নেওয়া গেলে তা সংঘর্ষের ঝুঁকি কমাবে। তবে ৪০০ কিলোমিটারের নিচের কক্ষপথে স্যাটেলাইট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাবে।’
তবে আরেকটি সম্ভাব্য উদ্বেগের বিষয় হলো, যদি স্যাটেলাইটগুলো দ্রুত বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তবে সেগুলো সম্পূর্ণভাবে না পুড়ে কিছু টুকরো পৃথিবীতে পড়ে যেতে পারে।
২০২৪ সালের আগস্টে কানাডার সাসকাচোয়ানের একটি খামারে স্টারলিংকের ২.৫ কেজির একটি ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এটিই এখন পর্যন্ত একমাত্র নিশ্চিত উদাহরণ, যেখানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটের টুকরো বায়ুমণ্ডলে পুড়ে না গিয়ে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়।
বিশেষজ্ঞদের মত, সৌরচক্রের বর্তমান উত্থানকালে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে, যা আগামী কয়েক বছর স্যাটেলাইট শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
মন্তব্য করুন: