প্রকাশিত:
৩১ মে ২০২৫, ১৭:০৫
ক্ষমতায় আসার ২৯ মাস আগে থেকেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট দীনা বলুয়ার্তে। আর এই আন্দোলন চলেছে তার পুরো মেয়াদজুড়েই। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা কেলেঙ্কারি, তদন্ত, বিতর্ক এবং গ্যাং সহিংসতার ঊর্ধ্বগতি।
৬৩ বছর বয়সী বলুয়ার্তের বিরুদ্ধে বর্তমানে অন্তত এক ডজন তদন্ত চলছে। এর মধ্যে রয়েছে বিলাসবহুল গয়না ও রোলেক্স ঘড়ির মতো উপহার ঘোষণায় ব্যর্থতার অভিযোগ। এ ঘটনা ‘রোলেক্সগেট’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ ছাড়া তার নাকের সার্জারির জন্য ঘোষণা না দিয়ে দুই সপ্তাহের অনুপস্থিতি নিয়ে চলছে তদন্ত। যদিও বলুয়ার্তে জোর দিয়ে বলেছেন, এটি ছিল চিকিৎসাজনিত, সৌন্দর্যবর্ধক নয়।
পাশাপাশি পুলিশের এক দমন অভিযানে ৫০ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু নিয়েও তদন্ত চলছে, যাতে তিনিও অভিযুক্ত। এই অশান্ত প্রেক্ষাপটে বলুয়ার্তের কখনোই বেশি জনপ্রিয়তা ছিল না, তবে মে মাসে তা নেমেছে একেবারে শূন্যের কোঠায়।
জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান ইপসোস জানিয়েছে, বর্তমানে তার গ্রহণযোগ্যতা মাত্র ২ শতাংশ — ক্ষমতা গ্রহণের সময় যা ছিল ২১ শতাংশ। ইপসোস পেরুর সভাপতি আলফ্রেদো তোরেস বলেছেন, ‘সম্ভবত এটি বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধানবিরোধী জনঅসন্তোষের রেকর্ড। ’ এটি ইপসোসের পরিচালিত ৯০টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন স্কোর।
দীর্ঘস্থায়ী একমাত্র প্রেসিডেন্ট?
তা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক পেরুভিয়ান রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে বলুয়ার্তে শুধু টিকে গেছেন বলেই নয় — বরং একধরনের প্রবীণ নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। গত আট বছরে পেরুতে রাষ্ট্রপতি বদল হয়েছে ছয়বার। বলুয়ার্তে যদি আগামী বছর মেয়াদ শেষ করেন, তাহলে তিনিই হবেন এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্ট।
দুর্বলতাই শক্তি?
সংসদে নিজের কোনো দল না থাকলেও বলুয়ার্তে টিকে আছেন ডানপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সমর্থনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটারদের উদাসীনতা ও রাজনৈতিক সুবিধাবাদ বলুয়ার্তেকে এখনও ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাহায্য করছে।
প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির বিশ্লেষক অগুস্তো আলভারেজ বলছেন, ‘পেরুতে একটি রাজনৈতিক বৈপরীত্য আছে : বলুয়ার্তে গত দশকের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল প্রেসিডেন্ট। তবে তার এই দুর্বলতাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।’
তার মতে, সংসদের জন্য এমন এক অকার্যকর প্রেসিডেন্ট অনেক উপযোগী — যাকে ব্যবহার করে নিজের ক্ষমতা বাড়ানো যায় এবং নিজেদের স্বার্থে আইন পাস করানো যায়। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা প্রোএটিকা বলছে, পেরুর সংসদে ‘দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থায় পশ্চাদপসরণ, পাল্টা সংস্কার এবং নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ সংসদ সদস্যদের রক্ষা করার প্রবণতা’ দেখা গেছে।
কী তাকে টিকিয়ে রেখেছে?
বলুয়ার্তের পক্ষে কাজ করছে আরো কিছু বিষয়। প্রথমত, সংসদের কাছে এখনো কোনো গ্রহণযোগ্য বিকল্প নেতা নেই। একমত হওয়ার মতো শক্তিশালী নেতা না থাকায় তাকেই রেখেছে সংসদ।
দ্বিতীয়ত, পেরুর অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় রয়েছে। ২০২৪ সালে দেশটির জিডিপি বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ আর ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বেড়েছে ৩.৯ শতাংশ। যা ২০২০ সালের করোনাজনিত মন্দার তুলনায় বড় অগ্রগতি। পেরুর মূল্যস্ফীতিও এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বিশ্লেষক আলভারেজ বলেন, ‘অর্থনীতি চলছে, জনগণের আয় বাড়ছে — এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ।’ তবে অনেকের মতে, এটি বলুয়ার্তের নীতির কারণে নয়, বরং তামার দাম বাড়ার মতো আন্তর্জাতিক কারণে হয়েছে। উল্লেখ্য, পেরু বিশ্বে অন্যতম প্রধান তামা উৎপাদনকারী দেশ।
জনগণের বিচ্ছিন্নতা ও ক্ষোভ
তবে রাজপথে বলুয়ার্তের জন্য ভালোবাসা নেই। পেরু এখন গ্যাং সহিংসতার নতুন ঢেউয়ে আক্রান্ত — যেখানে খুন, চাঁদাবাজি এবং অপরাধ বেড়েই চলেছে।
৬৩ বছর বয়সী শিক্ষক স্যাটুরনিনো কন্ডে বলেন, ‘তার কোনো সহানুভূতি নেই, তিনি অযোগ্য প্রেসিডেন্ট, নিরাপত্তা সমস্যার কোনো সমাধান দিতে পারছেন না।’ রাস্তায় বলুয়ার্তেবিরোধী মিছিলে ‘দিনা, আসেসিনা! (দিনা, খুনি!)’ স্লোগান এখন সাধারণ দৃশ্য। তবু বড় ধরনের বিদ্রোহ এখনো দৃষ্টিগোচর নয়।
ইপসোসের তোরেস নামে আরো একজন বলেছেন, ‘পেরুভিয়ানরা ভাবছেন, এতে লাভ নেই। তিনি যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে তাকে প্রতিস্থাপন করবেন কোনো সংসদ সদস্য — অথচ সংসদের ভাবমূর্তিও ভয়াবহ। এ ছাড়া, মানুষের সামনে এখন এমন কোনো বিকল্প নেতা নেই যিনি মানুষকে উজ্জীবিত করতে পারেন — এ কারণেই বলুয়ার্তেকে সরাতে কেউ তেমন উৎসাহী নন।’
মন্তব্য করুন: