সোমবার, ৯ই জুন ২০২৫, ২৬শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ওয়ারেন্ট না থাকায় আবদুল হামিদকে গ্রেপ্তার করা হয়নি
  • গত অর্থবছরকে ছাড়িয়ে গেছে ১১ মাসের রপ্তানি আয়
  • ভোটারদের নিয়ে নিজেই শপথ পড়ে চেয়ারে বসে পড়ব
  • টাঙ্গাইলে মহাসড়কে ডাকাতি
  • রাজশাহীতে ৫৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
  • মানুষকে দু-মুঠো খাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার দল বিএনপি
  • করাচিতে জেল ভেঙ্গে পালিয়েছে দুই শতাধিক কয়েদি
  • আগামী বিশ্বকাপের জন্য ভারতের চার ভেন্যু চূড়ান্ত, পাকিস্তান খেলবে কোথায়?
  • সমান্তরাল বিষাদ
  • চাকরিপ্রার্থীদের জন্য গুগলের নতুন এআই টুল ‘ক্যারিয়ার ড্রিমার

দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও হাতিয়েছেন শতকোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৪

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। একই অভিযোগ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (ছাত্র প্রতিনিধি) তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ উঠেছে তারা তদবির বাণিজ্য ও ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসক-প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসনে সহায়তা করার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদ, গণপূর্ত, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে ঘুরে ঘুরে তদবির করতেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার পর মোয়াজ্জেম হোসেন ও তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২১ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেন এবং তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দিয়ে সরকারি আদেশ জারি হয়। অন্যদিকে ডা. মাহমুদুল হাসান বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। তিন সেখান থেকে ফিরবেন কিনা সেই সংশয় তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য এবং ফ্যাসিবাদের দোসর প্রকৌশলীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে উপজেলা প্রকৌশলী পর্যন্ত প্রায় সব গ্রেডের কর্মকর্তার বদলি-পদায়নে তদবির বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ঘুরে ঘুরে তদবির করতেন।

বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র, পানিসম্পদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার তদবির করতেন।
জানা যায়, উপদেষ্টা নিয়োগের কিছুদিনের মধ্যে মোয়াজ্জেম হোসেনকে সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) নিয়োগ দেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নিয়োগ পেয়েই তদবির বাণিজ্যে নেমে পড়েন মোয়াজ্জেম। গণমাধ্যমের দৃষ্টি এড়াতে তারা বিকাল চারটার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সচিবালয় এবং সরকারি দপ্তরে অবস্থান করে তদবির করতেন। তাদের ভয়ে তটস্থ থাকতেন বিগত সরকারের আমল থেকে কর্মরত কর্মকর্তারা।

ফলে মোয়াজ্জেমকে খুশি করতে সে যা চেয়েছে তাই দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে ঠিকাদারি তদবির করতেন মোয়াজ্জেম। এমনকি পুলিশের জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ, শটগানসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনায় ঠিকাদারদের বিল পাইয়ে দিতে তদবিরও করেছেন মোয়াজ্জেম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়েও ছিল মোয়াজ্জেমের বিচরণ। এই মন্ত্রণালয়ে বিগত সরকারের সময় কাজ পাওয়া যেসব ঠিকাদার পালিয়েছেন তাদের কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন নিয়োগ দেওয়া ঠিকাদারদের থেকে বড় অংকের কমিশন হাতিয়েছেন তিনি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঠিকাদার ও প্রকৌশলী বদলির তদবির করতেন তিনি।

সন্ধ্যার পর চলে যেতেন সেগুনবাগিচা গণপূর্ত অধিদপ্তরে। দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করে ঢাকা মহানগরী, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভাগীয় শহর, ঢাকার নিকটবর্তী জেলাগুলোয় প্রকৌশলী বদলির তালিকা করতেন। একেকটি বদলিতে লাখ লাখ টাকা দিতে হতো তাকে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন পৌরসভার সচিব ও প্রকৌশলী, সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন গ্রেডের কর্মকর্তা নিয়োগে বদলি বাণিজ্য করতেন এমন অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে চিহ্নিত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে তাদের পুনর্বাসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন মোয়াজ্জেম-এমন অভিযোগ খোদ স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাদের।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত দুই কর্মকর্তা (ছাত্র প্রতিনিধি) তুহিন ফারাবি ও মো. মাহমুদ ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা চিকিৎসক, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল, পরিচালক, উপপরিচালক, সিভিল সার্জন নিয়োগ-বদলির মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুজন মিলে মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল, পরিচালক, উপপরিচালক, সিভিল সার্জন নিয়োগ-বদলিতে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা আদায় করতেন।

এরপর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সিনিয়র সচিব হিসাবে নিয়োগ পান এক কর্মকর্তা। তাকেও নয়ছয় বুঝিয়ে বিপুলসংখ্যক চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি করেন তারা। এছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মিডওয়াইফ বদলিতে তারা দুই লাখ টাকা করে আদায় করতেন। এমনকি হজ টিমে নার্স ও ডাক্তারদের নাম ঢুকানোর জন্য টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ৮ আগস্টের পর সাবেক স্বাস্থ্য সচিবকে দিয়ে বেশ কিছু চিকিৎসক বদলি করান তুহিন ফারাবী ও ডা. মাহমুদুল হাসান। প্রতিটি বদলিতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করে নিয়েছেন তারা।

এছাড়া ৫ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়া ঠিকাদারদের স্থলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগে তারা কমিশন বাণিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে তুহিন ফারাবীকে অপসারণ করা হলেও মাহমুদুল হাসান এখনো বহাল তবিয়তে। সেসব টাকা রাশিয়ায় পাচার করেছেন বলে খোদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, মাহমুদ আগে থেকেই রাশিয়ায় বসবাস করতেন। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তিনি দেশে ফেরেন। তখন ফারাবী তাকে মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পাইয়ে দেন। তিনি রাশিয়া থেকে দেশে আর নাও ফিরতে পারেন।

অভিযোগের বিষয়ে মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমাকে অপসারণ করা হয়নি। আমি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। আগামী মাসে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) আমার মৌখিক পরীক্ষা আছে। এছাড়া আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরীক্ষায় ভাইভা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এসব কারণে আমি পদত্যাগ করেছি। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে ৪শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি এক টাকার দুর্নীতি করেছি কেউ তা প্রমাণ করতে পারবেন না।

এদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক পার্সনাল অফিসার (ছাত্র প্রতিনিধি) তুহিন ফারাবী এবং বর্তমান ব্যক্তিগত মো. মাহমুদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জানা গেছে, তারা অফিসে নেই। তুহিন ফারাবীকে ইতোমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। অপর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বর্তমানে একজন রোগীর সঙ্গে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। দুজনের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। সূত্র: যুগান্তর।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর