শনিবার, ১লা মার্চ ২০২৫, ১৭ই ফাল্গুন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের তারিখ জানাল নির্বাচন কমিশন
  • ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পাবে ৫০ লাখ পরিবার
  • আয়কর রিটার্ন দাখিলের ভুল অনলাইনেই সংশোধন করা যাবে
  • পদত্যাগপত্রে যা লিখলেন নাহিদ
  • অভিযানে কারও গাফিলতি পেলে ছাড় দেওয়া হবে না
  • ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষে পুলিশের সম্পৃক্ততা ছিল
  • প্রাথমিক সুপারিশমালা দিয়েছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন
  • দেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খুব ভালো
  • বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস ইতালির উপমন্ত্রীর
  • প্রয়োজনে নতুন করে র‌্যাব গঠন করা হবে

বৃষ্টিতে ব্যাপক হারে বাড়বে ডেঙ্গু রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৩২

চলতি বছর বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়া ও তাপ বৃদ্ধির কারণে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে কম। তবু ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এ বছর ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব অনেক বেশি পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে মশা ও ভাইরাস দুটিই পর্যাপ্ত রয়েছে।

চলমান বৃষ্টিপাতে রোগী ব্যাপক হারে বাড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সময় রোগটিতে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। চলতি বছর এ পর্যন্ত তিন হাজার ৮৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

এর মধ্যে মারা গেছে ৪৬ জন। গত বছর এই সময়ে রোগী ছিল ১০ হাজার ৪৫৫ জন, মৃত্যু ৬২ জনের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, গত বছরের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কম হলেও এ নিয়ে স্বস্তির সুযোগ নেই। কারণ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দুই জায়গায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব এবার অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

চলমান বৃষ্টিপাতের কারণে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়তে পারে। কারণ প্রজননের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত দুটিই এখন বিরাজমান।

কবিরুল বাশার বলেন, সাধারণত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর—এই কয়েক মাস ডেঙ্গুর জন্য উচ্চঝুঁকি থাকে। এই সময়ে বৃষ্টি হয়, মশার প্রজননের জন্যও উপযুক্ত তাপমাত্রা থাকে। সাধারণত মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে হলে মশার প্রজনন কমে যায়। আবার অতিবৃষ্টি এডিস মশার ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। তবে থেমে থেমে বৃষ্টি এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ায়। এখন বৃষ্টি কোন ধরনের হচ্ছে, এর ওপর নির্ভর করবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে এবং তা কী রূপ নিতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোশতাক হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মশক পরিকল্পনা প্রয়োজন। ষাটের দশকে যেভাবে আমরা ম্যালেরিয়া নির্মূল করেছিলাম, এর কাছাকাছি কিন্তু আমরা যেতে পারিনি। আমাদের শহর ও গ্রামে একসঙ্গে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করতে হবে।’

মোশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্রুত কমানো সম্ভব নয়। তবে প্রতিদিন মশা নিধন কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরে রোগীর সংখ্যা কমে আসবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নেতৃত্ব ও সহায়তায় কমিউনিটিভিত্তিক সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে প্রাণহানি কমাতে তিন ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাথমিক স্তরে রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়ার জন্য শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা স্থাপন করা, যাতে হাসপাতালের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ৩৫.৮৮ শতাংশ ঢাকা মহানগর ও ৬৪.১২ শতাংশ ঢাকার বাইরের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৯.৩ শতাংশ নারী ও ৬০.৭ শতাংশ পুরুষ। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৫.৬ শতাংশ নারী ও ৪৪.৪ শতাংশ পুরুষ।

কীটতত্ত্ববিদ জি এম সাইফুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর একই সেরুটাইপ (ধরন) গত বছরে ছিল। এ বছর একই ধরনের সেরুটাইপ থাকায় আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এ ছাড়া গত মাসে বৃষ্টিপাত ছিল না। তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি, যে কারণে মশার প্রজনন কম হয়েছে। তবে বর্তমানে বৃষ্টির যে ধরন, এতে প্রজননস্থল বেড়ে এডিসের সংখ্যাও বাড়বে। তাই এখন এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গু না বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি সরকারের নেওয়া নানা রকম উদ্যোগ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াকে কারণ মনে করেন।

দেশে প্রথম ২০০০ সালে ডেঙ্গুর বড় ধরনের প্রকোপ দেখা দেয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে গত বছর। সে বছর আক্রান্ত হয় তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ও মৃত্যু হয় এক হাজার ৭০৫ জনের। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রথমবার এক লাখ ছাড়ায়, সে বছর ভর্তি হয়েছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর