রবিবার, ৬ই অক্টোবর ২০২৪, ২১শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
  • সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা কামালসহ গ্রেপ্তার ৪

কনস্টেবল কাউসার মানসিকভাবে ‘অসুস্থ’, দাবি পরিবারের

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
১০ জুন ২০২৪, ১৬:৩৬

ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে সহকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার কনস্টেবল কাউসার আলী ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলে তার পরিবারের ভাষ্য।

তার স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন সাথী বলছেন, চাকরিতে থাকা অবস্থাতেই কয়েকবার পাবনায় এক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তার স্বামী।

তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কাউসারের মানসিক অসুস্থতার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

শনিবার (৮ জুন) রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের উত্তর পাশের গার্ডরুমের সামনে দায়িত্ব পালনের সময় কাউসার এসএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে হত্যা করেন। তার গুলিতে জাপান দূতাবাসের গাড়ি চালক সাজ্জাদ হোসেন শাহরুখও আহত হন।

ওই ঘটনায় নিহত মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহাবুবুল হক গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

কাউসার আলীর বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের দৌলতখালী দাড়ের পাড়া গ্রামে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়াত আলীর মাষ্টারের ছোট ছেলে তিনি। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, কাউসার ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১০ সালের দিকে তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেয়। তিনি কারো সাথে কথা বলতেন না এবং অল্পেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন। চাকুরিরত অবস্থায় এ ধরনের উপসর্গের কারণে তাকে কয়েক দফা চিকিৎসাও করানো হয়।

তবে কাউসার মাদকাসক্ত ‘ছিলেন না’ এবং পারিবারিকভাবে তেমন কোনো ‘সমস্যাও ছিল না’ বলে তার স্বজনদের ভাষ্য।

কাওসারের স্ত্রী সাথী বলেন, “গত ৪-৫ দিন ধরে আমাদের সাথে কম কথা বলছিল। মাঝে মধ্যে যখনই মানসিক রোগে আক্রান্ত হত, এরকম করত। কয়েকবার পাবনায় এক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাও করানো হয়েছে। চিকিৎসার কাগজপত্র আমার স্বামীর কাছে আছে।

“আমাদের পারিবারিকভাবে কোনো সমস্যা ছিলো না। তবে মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে কম যোগাযোগ করত।”

কাউসারের মা মাবিয়া খাতুন বলেন, “আমার ছেলে এমনিতে খুব ভালো। তার মাথার সমস্যা আছে। চাকরি শুরু করার কয়েক বছর পর ও অসুস্থ হয়। আমার সাথে শনিবার (৮ জুন) রাতে শেষবার কথা হয়েছে। আমার সাথে ভালোভাবেই কথা বলেছে। ‘মা কেমন আছ, আব্বা কেমন আছে’– এগুলো জিজ্ঞাসা করেছে। তবে কয়েকদিন ধরে বাড়িতে একটু কম কথা বলত আমার ছেলে।”

এ পরিবারের প্রতিবেশী দৌলতপুর সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, কাউসার মাদকাসক্ত ছিলেন না। তবে তার মানসিক অসুস্থতা ছিল।

“চাকরিতে যোগদানের ৫ বছর পর থেকে সে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ হলে আবার চাকরিতে যোগ দেয়।

ঠিক কী কারণে কাউসার তার সহকর্মীর ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, সেদিন রাত পৌনে ১২ টার দিকে কাউসার আলীর সঙ্গে ‘ডিউটি করা নিয়ে’ মনিরুলের বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। এক পর্যায়ে কাউসার উত্তেজিত হয়ে অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মনিরুলের শরীরে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। মাথার বাঁ পশে একাধিক গুলির চিহ্ন ছিল। বাঁ চোখ, বাম হাতের বাহু, ডান হাতের কনুই, গলার নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত- বুকে, পেটে, পিঠে বিভিন্ন স্থানে গুলির ক্ষত রয়েছে।

গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, টরাস এসএমটি সাবমেশিন গান দিয়ে কাউসার গুলি করেন। তার কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল।

"প্রতিটা ম্যাগাজিনে ৩০টি করে ৬০ রাউন্ড গুলি থাকে। একটা ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটা ম্যাগাজিন অস্ত্রে লাগিয়ে ৮ রাউন্ড গুলি করে। পরের ওই ম্যাগাজিন থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে।”

সেই রাতের পুরো ঘটনাটি রাস্তার অন্যপাশে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, মনিরুল ইসলাম অস্ত্র নিয়ে গার্ড রুমের লাগোয়া ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর কাউসার গার্ড রুমের ভেতর থেকে বাইরে আসেন।

মনিরুল এ সময় কাউসারের কাছে আসেন এবং একটু দূরত্ব রেখে তার সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এরপর কাউসার ভেতরে ঢুকে যান এবং মনিরুল ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

এক সময় গার্ডরুমের থাই গ্লাস সরিয়ে কাউসারের সঙ্গে মনিরুলের আবার কথা হয়। এ সময় তাকে হাত নাড়াতে দেখা যায়। পরে তিনি গার্ডরুমের আরো কাছে আসেন এবং কয়েক সেকেন্ড পর ভেতর থেকে কাউসারের অস্ত্র গর্জে উঠে।

সঙ্গে সঙ্গে মনিরুল ফুটপাথ থেকে রাস্তায় পড়ে যান এবং পরে আবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সময় না দিয়ে কাউসার বাইরে এসে তার শরীর লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এরপরেই মনিরুলের দেহ নিথর হয়ে যায়।

মৃত্যু নিশ্চিত হলে কাউসার এগিয়ে এসে মনিরুলের চায়নিজ রাইফেলটি নিয়ে ফুটপাথে উঠে পাশের দেয়ালে আঘাত করেন।

কিছুক্ষণ ওই অস্ত্রটি ফুটপাথে রেখে নিজের অস্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করে ঘাড়ে নেন কাউসার। পরে ফুটপাতে দাঁড়িয়েই কাছাকাছি এসে লাশের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন।

কাউসার মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে থাকলে তিনি কীভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, “সে মানসিকভাবে অসুস্থ এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। পরিবার এ ধরনের দাবির পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।"


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর