সোমবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৪, ২২শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
  • সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা কামালসহ গ্রেপ্তার ৪

দুর্গাপুরে পাহাড়ি গ্রামে পানির কষ্টে মানুষ

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩৬

সীমান্তবর্তী নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় পাহাড়ি গ্রামগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানির সংকট পুরোনো। কিন্তু এবারের তীব্র দাবদাহে সেই সংকট আরও বেড়েছে। পাহাড়ে প্রায় প্রতিটি ঘরে এখন বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে। পাহাড়ি ঝরনার ছড়ার ময়লাযুক্ত পানি ও পুকুরের ঘোলা পানিই এখন একমাত্র ভরসা।

দুর্গাপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন ও কুল্লাগড়া ইউনিয়ন ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চল। সেখানকার ১০ থেকে ১২টি গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স¤প্রদায়ের মানুষের বসবাস। তবে তাদের কষ্টের অপর নাম পানি। পাহাড়ি ঝরনা ছড়ার ও পুকুরের দূষিত পানি দিয়ে করতে হচ্ছে রান্নাবান্না,গোসলসহ সব ধরনের কাজ। খেতেও হচ্ছে সেই পানি। এতে দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। বর্তমানে ওই সব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের কষ্ট এখন চরম আকার ধারণ করেছে।

এনিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,সদর ইউনিয়নের গোপালপুর,ভবানীপুর,ফান্দা,বারমারী,ভরতপুর,গাজিকোনা গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় শুকনো মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি আসে না। এজন্য তাঁরা বাধ্য হয়ে পুকুর বা পাহাড়ি ছড়ার পানি খেতে হয়। আর এতে পেটের অসুখ,চর্ম রোগসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। ওই গ্রামগুলোতে দিন আনে দিন খায় এমন হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় তাদের পক্ষে গভীর নলকূপ বসানো কিংবা গভীর কুয়া তৈরি করা সম্ভব নয়। গ্রামে দু-একজন অধিক অর্থ ব্যয় করে সাবমারসিবল বসালেও বেশিরভাগ মানুষের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি।


এদিকে গত কয়েক বছর ধরে পানি পেতে হতদরিদ্র পরিবারগুলো তিন চাকের রিং বসিয়ে অগভীর কুয়া তৈরি করে খাবার পানি সংগ্রহ করলেও শুকনো মৌসুমে সেখানে পানি থাকে না। কোনো কোনোটাই পানি থাকলেও সেটা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। একটু ভালো পানির আশা করলেও দূরদূরান্ত থেকে কাঁধে করে বয়ে এনে পান করতে হয় ।


পুঠিয়ার বানেশ্বরে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়
গ্রামগুলোতে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির অভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবারগুলো জানায়,তাদের পানির খুবই কষ্ট করতে হচ্ছে। পাহাড়ি ছড়ার পানি আর পুকুরের ঘোলা পানিই এখন খেতে হচ্ছে। তাও দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়। সরকারিভাবেও কোনোরকম সহযোগিতা পাচ্ছে না তারা।


দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের আদিবাসী নারী বুবু মারাক। তিনি দরিদ্র মানুষ। তাঁর বাড়িতে নলকূপ না থাকায় পানির জন্য সারা বছরই কষ্ট করতে হয়। তিনি বলেন,আমরার কল (টিউবওয়েল) নাই। আমরা অনেক আগে থাইকা পাহাড়ের ঝড়নার যে ছড়ার পানি আছে ওইডাই খাই। রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করি। খালি আমি না সবারই এই অবস্থা।

একই এলাকার প্রবন্দ হাজং বলেন,আমি দীর্ঘদিন পাহাড়ি ছড়ার পানি ব্যবহার করেছি। এই পানি খেয়ে অসুস্থ হতে হয়েছে অনেকবার। এখন একটু ভালো পানি খাওয়ার জন্য ৪০ হাজার টাকা ঋণ করে বাড়ির সামনে সাবমারসিবল বসিয়েছি।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসা রেগুলার মানকিন বলেন,আমাদের পানির খুবই অভাব। পাহাড়ি ছড়ায় গর্ত করে সে জায়গা থেকেই পানি সংগ্রহ করি সবাই। কিন্তু এই পানি বিশুদ্ধ না হওয়ার নানারকমের রোগের দেখা দেয় সবসময়ই। আমাদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি আমি।

সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য রীতা নকরেক বলেন,আমাদের গ্রামে পানির তীব্র সংকট। পানির অভাবে গোসল,রান্নাবান্না কাপড় চোপড় পরিষ্কারসহ নিত্যদিনের কাজে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একদিকে যেমন পানির অভাব অন্যদিকে এবারের তীব্র গরমের কারণে পাহাড়ি ছড়া বা পুকুরের পানি দিনের বেলায় অনেক গরম হয়ে থাকায় রাতে আনতে হয় সবার। সরকারিভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলে এলাকার মানুষের উপকার হতো।

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বলেন,সীমান্তবর্তী আদিবাসী গ্রামগুলোতে গভীর টিউবওয়েল বসাতে হলে পাথর সরিয়ে প্রায় চার থেকে পাঁচ'শ ফুট নিচে পর্যন্ত যেতে হয়। তার জন্য ব্যয়বহুল খরচ যা সেখানকার মানুষের কষ্টসাধ্য। তবে বিকল্প হিসেবে গভীর রিং টিউবওয়েল বসানো যায় তাহলে আদিবাসীদের সুপেয় পানির সমস্যা কিছুটা দূর হবে।

এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুজ্জামান বলেন,পাহাড়ি এলাকায় পাথরের জন্য গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট নিরসনে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এই পানির সংকট দূর করতে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করতে চাচ্ছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানিয়েছি।

এ নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম. রকিবুল হাসান বলেন,পানির সংকটের করতে ও ওই গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর