মঙ্গলবার, ৮ই অক্টোবর ২০২৪, ২২শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সেপ্টেম্বরে সড়কে প্রাণ গেল ৪২৬ জনের
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে অপেক্ষায় শরিকেরা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত:
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৫৭

অবশেষে ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন–সমঝোতার মাধ্যমেই ভোট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার(৪ ডিসেম্বর) রাতে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কোন কোন আসনে ছাড় দেবে ক্ষমতাসীন দল, সে ব্যাপারে জানানো হয়নি। সমঝোতার সুনির্দিষ্ট সময়ও বলা হয়নি। অপেক্ষায় রাখা হলো শরিকদের।

 সোমবার রাতে গণভবনে ১৪–দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শুরুতে ‘এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’ জেতায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ১৪ দলের নেতারা। বৈঠক শেষে নৈশভোজে অংশ নেন নেতারা। এ সময়ও অনানুষ্ঠানিক নানা আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী ও শরিক দলের নেতারা।


বৈঠকে অংশ নেওয়া সূত্রগুলো বলছে, আসন নিয়ে সমঝোতা হলে শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তবে যেসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর ব্যাপারে কোনো চেষ্টা চালাবে না আওয়ামী লীগ। জোটের শরিক দলের একজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টি তোলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি স্বতন্ত্র কাউকে বসে যেতে বলবেন না। কারণ, ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য তিনি ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র দাঁড়াতে বলেছেন। ভোট উৎসবমুখর করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী দরকার আছে।

বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই আসন বণ্টনের বিষয়ে সমঝোতা করে ফেলতে হবে। এরপরও কোথাও সমস্যা হলে তিনি দেখবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শরিকদের কটি আসনে ছাড় দেওয়া হবে—এ বিষয়ে কাজ করতে আওয়ামী লীগের চারজন নেতার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়।

■ আসন বণ্টনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের চারজন নেতার সমন্বয়ে কমিটি গঠিত।

■ জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিকেরাও যাতে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করে, সেই পরামর্শ।

■ বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিকদের সব মিলিয়ে আটটি আসন রয়েছে।

এখন এই কমিটির সদস্যরা শরিকদের সঙ্গে আরও কথা বলবেন। এরপর তালিকা চূড়ান্ত হলে জোটের প্রধান শেখ হাসিনার কাছে জমা দেবেন। এ বিষয়ে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই আসন বণ্টনের বিষয়ে সমঝোতা করে ফেলতে হবে। এরপরও কোথাও সমস্যা হলে তিনি দেখবেন।


এদিকে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ১৪ দলের বৈঠক সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন বলে জানা গেছে।

শরিক দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, তাঁদের ছোট দল, এ জন্য বারবার নৌকা প্রতীকে ভোট করেন। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক মূল্য আছে। তাঁদের যেন ভুঁইফোড় দলের সঙ্গে তুলনা করা না হয়।


ভোট হবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করেন। এরপর শরিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর খাবার টেবিলে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, তিনি সংবিধানের বাধ্যবাধকতার বাইরে যেতে পারবেন না। দেশি–বিদেশি নানা চাপ, ষড়যন্ত্রের মধ্যে তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। নির্বাচন দেশে যথা সময়ে হবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।

সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তিনি পিছপা হবেন না। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। দেশের জনগণের প্রতি তাঁর আস্থা আছে।

বৈঠকের সূত্রে আরও জানা গেছে, শরিক দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, তাঁদের ছোট দল, এ জন্য বারবার নৌকা প্রতীকে ভোট করেন। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক মূল্য আছে। তাঁদের যেন ভুঁইফোড় দলের সঙ্গে তুলনা করা না হয়। ভোটের পরও নানা চাপে তাঁদের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মূল্য আছে বলেই তো একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরও অনেক দূর যেতে হবে।

একজন নেতা বলেন, জোটের আসনে থাকা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উঠিয়ে দেওয়া যায় কি না। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এটা তিনি করবেন না। তিনি এ–ও বলেছেন, জাতীয় পার্টিসহ সব দলকে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। নিজের দলের নেতাদেরও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মোকাবিলা করে জিতে আসতে হবে। ১৪ দলের শরিকেরাও যাতে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করে, সেই পরামর্শ দেন।

বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব আছে ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি, জাসদের তিনটি এবং তরীকত ফেডারেশন ও জেপির একটি করে আসন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আটটি আসন রয়েছে তাদের। সব কটিতেই নৌকা প্রতীকে ভোট করে জয়ী হন শরিক দলের নেতারা।


চাওয়া বড়, পাওয়া নিয়ে সংশয়

বৈঠক শেষে একটি শরিক দলের প্রধান নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, মনে হচ্ছে আসন–সমঝোতা চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে। দু–এক দিনের মধ্যে শীর্ষ কয়েকজন নেতার আসন চূড়ান্ত হয়ে যাবে। বাকিগুলো ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত গড়াতে পারে। ওই নেতা আরও বলেন, শরিকেরা তাদের কথা বলেছে। প্রধানমন্ত্রী বেশির ভাগ বক্তব্যই শুনেছেন। জবাব দিয়েছেন কম। এখন জোটের প্রধান শেখ হাসিনা কী করেন, সেদিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ১৪ দলের শরিকেরা জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর কাছে নিজেদের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে। এমনকি তালিকায় শরিকদের অগ্রাধিকারের আসন কোনগুলো, সেটাও উল্লেখ করা হয়।

জোটের সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি (জেপি), তরীকত ফেডারেশন ও সাম্যবাদী—এই দলগুলো সব মিলিয়ে ২৫টির মতো আসন তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে।

তবে আওয়ামী লীগ এবার ছয়-সাতটির বেশি আসন জোটের শরিকদের দিতে রাজি নয়। সোমবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শরিকদের বলেন, যেসব আসনে শরিকেরা ছাড় পাবে—এর বাইরেও শরিকদের প্রার্থী রাখতে হবে। তাঁরা নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করবেন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে।

বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব আছে ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি, জাসদের তিনটি এবং তরীকত ফেডারেশন ও জেপির একটি করে আসন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আটটি আসন রয়েছে তাদের। সব কটিতেই নৌকা প্রতীকে ভোট করে জয়ী হন শরিক দলের নেতারা।

এবার বেশ কিছু আসনে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনী–১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নির্বাহী সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। সোমবার বৈঠক শেষে শিরীন আখতারের আসন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। তবে সূত্র বলছে, এটি ছাড় না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

একইভাবে তিনবারের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। রাশেদ খান মেনন বরিশালের দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বর্তমানে এর একটি আসনে আওয়ামী লীগের এবং আরেকটিতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রয়েছেন।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের মোশাররফ হোসেন নির্বাচন না করলে তাঁকে যেন জোটের প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই আসনে মোশাররফের ছেলে মাহাবুব উর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে সোমবার(৪ ডিসেম্বর) তিনি নিশ্চিত কোনো বার্তা পাননি।

জাতীয় পার্টি জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলামের চাওয়া আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে। একমাত্র জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি।

২০০৮ সাল থেকে ১৪-দলীয় জোট একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জোটের নেতারা নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করে আসছেন।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর