মঙ্গলবার, ৮ই অক্টোবর ২০২৪, ২২শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সেপ্টেম্বরে সড়কে প্রাণ গেল ৪২৬ জনের
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৪৫

সিরাজদিখান থানার পরেই সেতু পেরিয়ে বাঁয়ের রাস্তায় ঢুকতেই লোহা-ইস্পাতের সরু দীর্ঘ এক সেতু। নিচ দিয়ে বেয়ে যাচ্ছে ইছামতী। এই সেতু পেরিয়ে আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার পেরিয়ে ভাসানচর সেতু। বছরখানেক আগেও এখানে গাড়ি থেকে নেমে নামতে হতো সেতুর নিচে। নদীর পার ধরে গ্রামীণ হাঁটা পথ। এবারও নামতে হলো, তবে গাড়ি নিয়ে। সরু পিচঢালা পথ তৈরি হয়েছে। ইছামতী এখানেও।


ইছামতীর পার ধরে যেতে যেতেই গন্তব্যের আবহ ভালোই বোঝা গেল। মানুষ যাচ্ছে, মানুষ আসছে। একটু পরপর মোটরবাইক আর ইজিবাইক। ধীর লয়েই চালাতে হচ্ছিল গাড়ি। এগোতে এগোতে সুরের মূর্ছনা আর গানের বাণী স্পষ্ট হচ্ছিল, ধন্য ধন্য বলি তারে...।


ইছামতীর পাড়ে পদ্মহেম ধাম। বটবৃক্ষের তলায় শানবাঁধানো মঞ্চে শ্বেতসঙ্গতে সাধু-বাউলেরা শোনাচ্ছেন লালন সাঁইয়ের বাণী।  শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাত তখন ১২টা পেরিয়ে গেছে। দরাজ গলায় চুয়াডাঙ্গার লতিফ শাহ গাইছেন, ধন্য ধন্য বলি তারে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া ‘ধন্য প্রহর’ চলছে তখন।


পদ্মহেম ধামের সাধুসঙ্গ এবার এক দিনের। শনিবার (২ ডিসেম্বর) আগমনী পর্ব দিয়ে শুরু হয়েছে সাধুসঙ্গ। বিকেল পেরোনোর পর সন্ধ্যায় ভক্তি পর্ব।

কবির জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতে এবারের আয়োজনে দূরের অনেক সাধু-গুরু আসতে পারেননি। আগামী ফাল্গুন মাসে আবারও সাধুসঙ্গ আয়োজনের ইচ্ছা রয়েছে তাঁদের।
এ পর্বে লালন সাঁইয়ের ভক্তিমূলক গান করেছেন সাধক বাউলেরা। তাঁদের কাছে এসব হলো বাণী। অধ্যাত্মবাদ, প্রকৃতি—বিষয় সবই। তবে এগিয়ে থাকে মানবতা, মানবিকতা।


সাধুসঙ্গের ভক্তিপর্বের শুরু হয় ধন্যপর্ব। এই যে আমি মানে আমি, আমাকে, আমার প্রকৃতি যে সৃজন হয়েছে, তাতে আমি ধন্য। কৃতজ্ঞচিত্তের গান-বাণী। মধ্যরাত পেরিয়ে চলে এই পর্ব।


ইছামতী নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠের পাশে বটগাছ। এসব ঘিরেই গড়ে উঠেছে পদ্মহেম ধাম। রাজধানীর কাছে লালনচর্চার দারুণ এক উদ্যোগ। পদ্মহেম ধামের প্রতিষ্ঠাতা কবির হোসেন (একতারা সাঁই হিসেবে দীক্ষিত)। তিনি বললেন, ‘২০০৬ সাল থেকে এই সাধুসঙ্গের আয়োজন করা হচ্ছে। এবার এটি ১৯তম সাধুসঙ্গ। সাধুসঙ্গের মাধ্যমে আমাদের এই অঞ্চলে লালন সাঁইয়ের বাণী প্রচারিত হচ্ছে, এটা বড় কথা। তরুণসহ সব প্রজন্মের মানুষের মধ্য লালন সাঁইয়ের গান ও বাণী ছড়িয়ে দিতে আমাদের এই চেষ্টা।’ প্রতিবছরের মতো এবারও দেখা গেল রাজধানী থেকে অনেক তরুণই এসেছেন সাধুসঙ্গের গান শুনতে।

কবির জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতে এবারের আয়োজনে দূরের অনেক সাধু-গুরু আসতে পারেননি। আগামী ফাল্গুন মাসে আবারও সাধুসঙ্গ আয়োজনের ইচ্ছা রয়েছে তাঁদের।

এরপরও পদ্মহেম ধামের বটতলায় লালনের বাণী শুনিয়েছেন কুষ্টিয়ার রাজ্জাক বাউল, ছমির বাউল, চুয়াডাঙ্গার আজমেরি ফকির, ফরিদপুরের পাগলা বাবলু, শিল্পকলা একাডেমির সাধুমেলার সেবক বিদ্যুৎ খ্যাপা, বাউলশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিরক রাজা, বাউল লগ্নাসহ অনেকে। আর পুরো দোসরপাড়া গ্রাম, ইছামতীর এপার-ওপারের মানুষ অপার হয়ে শুনেছেন লালনসংগীত।


রাত দুইটা পেরিয়ে যখন ফিরতি পথ ধরেছি, তখন গোষ্ঠলীলা শুরু হয়েছে। সহযাত্রী নর্মদা মিথুন বললেন, ‘এখানে এসে মনে হলো সবকিছুর উৎস মানুষ। মানুষকে কেন্দ্র করেই সব।’ ইছামতীর পারের এ আয়োজন আলো-আঁধারি, প্রকৃতি-মানুষে একাকার হয়ে যায়। সাধুসঙ্গকে কেন্দ্র করে ইছামতীর তীরে বসে যায় গ্রামীণ খাবারের স্টল, লেইস-ফিতাসহ নানা পণ্যের বাহারি স্টল। নাগরদোলাও চলে আসে আনন্দ দিতে। এভাবেই সার্থক হয় মানুষের চেষ্টা।

ধন্য প্রহর শেষ হতে হতে পেরিয়ে যায় মধ্যরাত। সাধুসঙ্গের রীতি মেনে শুরু হয় গোষ্ঠলীলা। এরপর রাত আড়াইটার দিকে বাল্যসেবা বা বিশ্রাম। সবার জন্যই সবজি খিচুড়ি। রোববার সকালে দিন বরণ করা হয় সাধুসঙ্গে। আগমনী পর্ব দিয়ে সমাপন ঘটে এবারের আয়োজনের। এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছিল দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর