শনিবার, ১লা মার্চ ২০২৫, ১৭ই ফাল্গুন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের তারিখ জানাল নির্বাচন কমিশন
  • ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পাবে ৫০ লাখ পরিবার
  • আয়কর রিটার্ন দাখিলের ভুল অনলাইনেই সংশোধন করা যাবে
  • পদত্যাগপত্রে যা লিখলেন নাহিদ
  • অভিযানে কারও গাফিলতি পেলে ছাড় দেওয়া হবে না
  • ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষে পুলিশের সম্পৃক্ততা ছিল
  • প্রাথমিক সুপারিশমালা দিয়েছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন
  • দেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খুব ভালো
  • বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস ইতালির উপমন্ত্রীর
  • প্রয়োজনে নতুন করে র‌্যাব গঠন করা হবে

ডেঙ্গু

বছরে মোট আক্রান্তের ৪০ শতাংশই সেপ্টেম্বরে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৮

ভাইরাসজনিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে সাধারণত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এ বছর নির্ধারিত সময়ের আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে।

চলতি বছরের মোট আক্রান্তের প্রায় ৪০ শতাংশই সেপ্টেম্বর মাসে শনাক্ত হয়েছে। যা উদ্বেগজনক- বলছেন চিকিৎসকরা।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কোনও ব্যক্তিকে কামড়ালে চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। আবার ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে যায়।

চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়া ৭৪ জনের মধ্যে ২১ জনই মারা গেছেন সেপ্টেম্বর মাসে। যা মোট মৃত্যুর ২৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া চলতি বছর সেপ্টেম্বরে মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৭ গুণ বেশি। ২০২২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে মারা যান মাত্র ৩ জন। অন্যদিকে, এ বছর আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ২৮ জন মারা গেছেন। যা মোট মৃত্যুর ৩৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জুলাই মাসে মারা যান ১৬ জন বা মোট মৃত্যুর ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি শিশুর

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে শিশুরা কম আক্রান্ত হলেও মৃত্যু বেশি। মোট ৭৪ জনের মধ্যে ২৬ জন শিশু মারা গেছে। যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৩৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে নারীরা। এ বছর প্রায় ২৫ জন বা ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ নারী মারা গেছে ডেঙ্গুতে। অন্যদিকে পুরুষ মারা গেছে ২৩ জন। যা শতাংশের হিসেবে ৩১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। শক সিনড্রোম, হেমোরেজিক সিনড্রোম ও এক্সপান্ডেট সিনড্রোম ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা।

২০২০ সালে ডেঙ্গুতে কেউ মারা না গেলেও ২০২১ সালে ৫ জন এবং ২০২২ সালে মারা গেছেন ৪১ জন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৬৭৯ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ গত তিন মাসে এর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে সদ্য শেষ হওয়া সেপ্টেম্বর মাসে ৩ হাজার ৮৯২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা মোট রোগীর প্রায় ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ। আগস্ট মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগী পাওয়া যায় ৩ হাজার ১১ জন। যা রোগীর প্রায় ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ। জুলাইয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৩১১ জন ডেঙ্গু রোগী। যা এ বছর মোট আক্রান্তের ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

এ ছাড়া গত জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল ২৮৩ জন। মে মাসে ৫৩ জন, এপ্রিল মাসে ১৮ জন, মার্চ মাসে ১২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন এবং জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত পাওয়া যায় ৭৭ জন।

উপজেলার চেয়ে নগরে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি

গত এক বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে উপজেলার চেয়ে নগরের রোগী বেশি। মোট ৯ হাজার ৬৭৯ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৭৭৫ জনই নগরের বাসিন্দা এবং ২ হাজার ৯০৪ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। আবার উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী মিলেছে সীতাকুণ্ড, পটিয়া এবং হাটহাজারী উপজেলায়। সীতাকুণ্ডে ১ হাজার ২৪ জন, পটিয়ায় ৩১৫ জন এবং হাটহাজারীতে ২৩৭ জন। উল্লেখ্য, তিন উপজেলাই চট্টগ্রাম নগরের খুব কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত।

এদিকে চলতি বছরের গত ৯ মাসের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনগুলোতে এর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, ভরা বর্ষায় সাধারণত এ রোগের প্রকোপ থাকে না। বর্ষা শেষ হওয়ার পরপরই এর প্রকোপ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ, জুলাই থেকে পরের মাসগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। যদিও এ বছর খুব তাড়াতাড়িই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। এ প্রকোপ অব্যাহত থাকলে এ বছরের পরের মাসগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটকূশলী মো. মাঈনউদ্দিন বলেন, বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার রাখা আমাদের দায়িত্ব। কোথাও পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। জরিপে দেখা গেছে, নগরের আকবর শাহ, ষোলশহর, পাঁচলাইশ এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। তবে চট্টগ্রামের অন্য এলাকায় এডিস মশা পাওয়া যাবে না বা ডেঙ্গু রোগ ছড়াবে না তা কিন্তু নয়। একটি মশা এক কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। সুতরাং মানুষকে সচেতন হতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এর মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ  বলেন, জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর হলেই প্রথম দিনেই এনএস ওয়ান পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়লে পর্যাপ্ত পানি জাতীয় খাবার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকবেন। এসময়ে অ্যাসপিরিন জাতীয় ও ব্যথার ওষুধ বন্ধ রাখতে হবে। বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শরীরে কোথাও রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্লাটিলেট অথবা রক্ত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই উত্তম। সেজন্য মশারি ব্যবহার, বাচ্চাদের ফুল হাতা জামা পড়ানো, বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সাধারণ জনগণের সচেতন হতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর